কারুশিল্পের নিখুঁত নিদর্শন, পরিশ্রম ও একাগ্রতার প্রতীক বাবুই পাখির বাসা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় তাল, খেজুর কিংবা উঁচু গাছে শোভা পাওয়া এই বাসা এখন যশোরের অভয়নগরে খুব কমই চোখে পড়ে। সম্প্রতি উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের এরশাদ এতিমখানা মাদ্রাসার সামনে কিছু তালগাছে বাবুই পাখির বেশ কয়েকটি বাসা দেখা গেছে। বুধবার ( ১৮ জুন) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার সামনে কয়েকটি তালগাছের পাতাগুলোতে ঝুলছে একাধিক বাসা। নওয়াপাড়া থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে দৃশ্যটি দেখতে ভিড় করছেন কোতূূহলী মানুষ।
জানা যায়, বাবুই পাখিকে ‘তাঁতি পাখি’ ডাকা হয়। গ্রীষ্মকাল তাদের প্রজনন মৌসুম। এই সময় পুরুষ বাবুই খড়কুটো জোগাড় করে নিজের ঠোঁট দিয়ে পাতা সেলাইয়ের মতো করে নিপুণভাবে বাসা গড়ে তোলে। বাবুইয়ের বাসা আগের মতো গ্রামের আঁকাবাঁকা পথে আর তেমন দেখা যায় না। তাল ও খেজুরগাছ কমে যাওয়ায় তাদের বাসা বানানোর উপযুক্ত স্থানও কমছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আজিজ মোড়ল বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমাদের তালগাছে বাবুই বাসা বানায়। ছোটবেলায় এ দৃশ্য ছিল খুব স্বাভাবিক। এখন গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, ফলে বাসাও হারিয়ে যাচ্ছে।’
প্রেমবাগ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জসিমউদ্দীন খোকন বলেন, ‘বাবুই পাখির বাসা একসময় বাংলার গর্ব ছিল। আজ তা স্মৃতির পাতায়। তাদের রক্ষায় এখনই সচেতনতা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু বইতেই এসব দেখবে।’
উপজেলার পল্লী মঙ্গল আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ খায়রুল বাসার বলেন, ‘এই পাখিগুলো শুধু আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষারও উপাদান। ওদের বাসা বানানো দেখেই আমরা শিখতাম ধৈর্য আর পরিশ্রম। এখন আর তেমন সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, ‘বাবুই পাখি টিকিয়ে রাখতে তাল-খেজুরসহ দেশীয় গাছ আরও বেশি লাগাতে হবে। পরিবেশবান্ধব কৃষি ও কীটনাশক নিয়ন্ত্রণেও উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’
খুলনা গেজেট/এএজে